এক ছিল রাঙামাটি, যেখানে সব কিছুই রাঙা রঙের ছিল। রাঙামাটির মানুষরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মজার। তাদের গ্রামের নাম ছিল রাঙামাটি গ্রাম। গ্রামে থাকতেন রামু নামের এক ছোট্ট ছেলে। রামু ছিল খুবই চঞ্চল এবং সবসময় নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাইত।
রামুর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিল তার সঙ্গী, একটি বুদ্ধিমান এবং মজার রঙিন খরগোশ, যার নাম ছিল লালু। লালু ছিল বিশেষ কারণ সে কথা বলতে পারত এবং রামুর সাথে সবসময় নতুন নতুন খেলা খেলতে পছন্দ করত।
একদিন রামু এবং লালু রাঙামাটির পার্কে খেলছিল। হঠাৎ তারা দেখল একটি অদ্ভুত দরজা, যা আগে কখনও দেখেনি তারা। দরজাটি খুবই রঙিন এবং তার উপরে লেখা ছিল, “রহস্যের দ্বার।” রামু কৌতূহল বশত দরজার দিকে এগিয়ে গেল এবং লালুকে বলল, “লালু, এই দরজা খুলে দেখি কি রহস্য লুকিয়ে আছে।”
লালু একটু দ্বিধা করল, কিন্তু রামুর উত্তেজনা দেখে সে রাজি হল। তারা দুজনেই দরজার দিকে এগিয়ে গেল এবং রামু দরজার হ্যান্ডেল ধরে টানল। দরজাটা ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করল এবং তাদের সামনে এসে গেল এক বিস্ময়কর জগত।
রহস্যের জগত
দরজার পিছনে ছিল এক আলোকিত পথ, যা নিয়ে যাচ্ছে একটি অদ্ভুত এবং রঙিন জঙ্গলে। রামু এবং লালু হাত ধরে হাঁটা শুরু করল। জঙ্গলে প্রবেশ করার সাথে সাথে তারা দেখল রঙিন পাখি, মজার গাছ এবং হাস্যকর প্রাণীরা।
একটি গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ছিল এক বুড়ো জাদুকর, যার নাম ছিল মিস্টার রঙালী। মিস্টার রঙালী তাদের স্বাগত জানালেন এবং বললেন, “স্বাগতম, রামু এবং লালু! এখানে আসার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এই জগতের মধ্যে অনেক মজার ও চ্যালেঞ্জিং কাজ রয়েছে, এবং আমি চাই আপনাদের সাহায্য করতে।”
রামু এবং লালু আগ্রহভরে জিজ্ঞেস করল, “কিভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি, মিস্টার রঙালী?”
মিস্টার রঙালী বললেন, “এই জঙ্গলের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র নদী আছে, যেখানে সোনালী মাছ থাকে। কিন্তু সম্প্রতি, নদীতে এক জাদুকরী দুষ্টু ছেলেরা এসে সোনালী মাছগুলোকে জালে ধরছে এবং তাদের আনন্দ নিচ্ছে। আমাদের এই মাছগুলোকে মুক্ত করতে হবে যাতে তারা আবার নদীতে ফিরে যেতে পারে। আপনি দুজন যদি এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারেন, তবে আমি আপনাদের একটি বিশেষ পুরস্কার দেব।”
রামু এবং লালু একসাথে সিদ্ধান্ত নিল, “আমরা অবশ্যই সাহায্য করব!”
সোনালী মাছ উদ্ধার অভিযান
রামু এবং লালু মিস্টার রঙালীর নির্দেশনা অনুসরণ করে নদীর দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে আসতেই তারা দেখতে পেল ছেলেরা সোনালী মাছগুলোকে জালে ধরতে ব্যস্ত। রামু বলল, “আমরা কিভাবে এই ছেলেদের থামাতে পারি যাতে মাছগুলো মুক্তি পায়?”
লালু একটি আইডিয়া দিল, “হয়তো আমরা কিছু মজার করতে পারি যাতে তারা মনোযোগ হারিয়ে আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক হয়।”
রামু এবং লালু মিলে একটি মজার পরিকল্পনা করল। তারা নিকটবর্তী গাছ থেকে রঙিন পাতা ও ফল সংগ্রহ করল এবং একটি বিশাল রঙিন সেতু তৈরি করল। তারপর তারা ছেলেদের কাছে গেল এবং বলল, “হ্যালো বন্ধুরা! আমরা একটি মজার খেলা শুরু করতে চলেছি, তুমি সবাই আমাদের সাথে খেলবে?”
ছেলেরা আগ্রহী হয়ে বলল, “কি খেলা?”
রামু বলল, “এই রঙিন সেতুর উপর দিয়ে আমাদের পাস দিয়ে যেতে হবে এবং যিনি সবচেয়ে দারুণভাবে পাস করবেন, তাকে আমরা একটি বিশেষ পুরস্কার দেব।”
ছেলেরা খুশিতে রাজি হল এবং সবাই সেতুর উপর দিয়ে পাস করতে শুরু করল। সেতুটি এতই রঙিন এবং মজার ছিল যে ছেলেরা মজা করতে করতে মাছগুলো ছাড়তে শুরু করল। রামু ও লালু এই সময়ে জালের দিকে এগিয়ে গেল এবং সোনালী মাছগুলোকে মুক্ত করল।
ছেলেরা বুঝতে পারল তাদের কাজের ভুল এবং ক্ষমা চাইল। তারা বলল, “আমরা মাফ করবেন এবং আর কখনও মাছগুলোকে বিরক্ত করব না।”
মিস্টার রঙালী তখন উপস্থিত হলেন এবং রামু ও লালুকে ধন্যবাদ জানালেন। তিনি বললেন, “আপনাদের সাহস এবং মেধার জন্য ধন্যবাদ। এখন আমি আপনাদের পুরস্কার দেব।”
বিশেষ পুরস্কার
মিস্টার রঙালী তাদের কাছে এক চমকপ্রদ রঙিন পাথর দিলেন, যা যেকোনো ইচ্ছা পূরণ করতে সক্ষম ছিল। রামু এবং লালু সেই পাথরটি নিয়ে খুব খুশি হলেন। মিস্টার রঙালী বললেন, “এই পাথরটি ব্যবহার করুন শুধুমাত্র মজার ও সুখী কাজের জন্য।”
রামু এবং লালু বিদায় নিয়ে জঙ্গলের বাইরে ফিরে এলেন। মিস্টার রঙালীর জগত থেকে ফিরে আসার পরে, তারা বুঝতে পারল যে হাসি এবং মজাই জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।
রামু তার গ্রামের সবাইকে এই গল্প বলল এবং তাদেরও সাহায্য করতে উৎসাহিত করল। রাঙামাটি গ্রাম আবারও হাসি ও আনন্দে ভরে উঠল, এবং রামু ও লালু সবসময় মজার কাজ করে সবাইকে সুখী রাখত।