রামু এবং তার বন্ধু লালু রঙিন খরগোশ, তাদের আগের অভিযানে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে আরও এক নতুন এবং চমকপ্রদ অভিযানে বের হলেন। এইবারের লক্ষ্য ছিল সময়ের মূহুর্তগুলিতে ভ্রমণ করা এবং অতীতের রহস্য উদ্ঘাটন করা।
সময়ের যাত্রার শুরু
একদিন রামু তার দাদুর কাছে বসে গল্প শুনছিলেন। দাদু বললেন, “রামু, সময়ের মূহুর্তগুলিতে ভ্রমণ করার এক বিশেষ যন্ত্র আছে, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের যুগে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হলে তোমাদের সত্যিকারের বন্ধুত্ব এবং সাহসিকতার প্রয়োজন হবে।”
রামু এবং লালু এই গল্প শুনে অত্যন্ত উৎসাহী হলেন। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তারা সময়ের যাত্রা করবে এবং অতীতের রহস্য উদ্ঘাটন করবে।
যাত্রার প্রস্তুতি
রামু এবং লালু মিস্টার রঙালীর কাছে গেলেন, যিনি গ্রামের জাদুকর। মিস্টার রঙালী তাদের সময়ের যাত্রার জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র দিলেন, যা ছিল একটি রঙিন ঘড়ি। তিনি বললেন, “এই ঘড়িটি তোমাদের সময়ের যাত্রায় সাহায্য করবে। কিন্তু সাবধান, সময়ের মূহুর্তগুলিতে ভ্রমণ করতে হলে তোমাদের মনোযোগ এবং বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন।”
রামু এবং লালু ধন্যবাদ জানালেন এবং প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। তারা ঘড়িটি হাতে নিয়ে এক চুপচাপ সন্ধ্যা শুরু করলেন।
সময়ের যাত্রা
রাতের আকাশে রঙিন তারাগুলো ঝিকিমিকি করছে। রামু ঘড়িটি ঘোরালেন এবং বললেন, “লালু, আমরা এখন সময়ের যাত্রা শুরু করব।”
ঘড়িটির সঠিক সময় নির্ধারণ করে, তারা এক ঝাঁক টানে এবং হঠাৎ করে তারা দেখতে পেলেন সবকিছু পরিবর্তিত হচ্ছে। তারা এক অজানা জায়গায় পৌঁছে গেলেন, যেখানে সবকিছুই ভিন্ন রঙের এবং রঙিন ছিল।
প্রথম যুগ: প্রাগৈতিহাসিক সময়
তারা প্রথমে প্রাগৈতিহাসিক সময়ে পৌঁছালেন। সেখানে তারা দেখলেন বড় বড় ডাইনোসর, ভদ্রমৎস্যরা এবং অদ্ভুত গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে হাঁটছিলেন। রামু এবং লালু দেখতে পেলেন এক ছোট ডাইনোসর, যার নাম ছিল ডিনো। ডিনো ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ এবং তার সঙ্গে তারা দ্রুত বন্ধু হলেন।
ডিনো তাদের জানালেন, “তোমরা কীভাবে এখানে এসেছো?”
রামু বললেন, “আমরা সময়ের যাত্রা করতে এসেছি এবং তোমার যুগে এসেছি।”
ডিনো বলল, “তাহলে তোমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের এখানে একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”
ডাইনোসরের সমস্যা
ডিনো জানালেন, “আমাদের প্রাগৈতিহাসিক গাছগুলো এখন মরা যাচ্ছে। আমরা জানি না কেন। যদি এই গাছগুলো মারা যায়, তাহলে আমাদের খাবার ও আশ্রয়স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
রামু ও লালু ভাবতে লাগলেন, “কিভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি?”
ডিনো বললেন, “আমরা সম্প্রতি শুনেছি যে এক জাদুকরী জলাশয়ে মায়াবী পানি আছে, যা গাছগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। কিন্তু সেই জলাশয়টি খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের সাহসিকতার প্রয়োজন।”
জাদুকরী জলাশয়ের সন্ধান
রামু এবং লালু সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তারা ডিনো এবং তার বন্ধুদের সাথে জলাশয় খুঁজে বের করবে। তারা রঙিন গাছপালা, বিশাল ডাইনোসর এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর সঙ্গে মিলে যাত্রা শুরু করলেন।
পথ চলতে চলতে, তারা এক বিশাল ঝর্ণার সামনে এলেন। ঝর্ণাটি ছিল এতই মজার রঙের, যেন এক রঙিন রাগিণী ঝরনা।
রামু বললেন, “এই ঝর্ণাটি কি আমাদের জলাশয় খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে?”
ডিনো বললেন, “হ্যাঁ, এই ঝর্ণার পানি মায়াবী এবং এটি আমাদের জলাশয়ের দিকে নিয়ে যাবে।”
তারা ঝর্ণার পাশে গেলেন এবং পানিতে ডুব দিলেন। হঠাৎ করে, তারা দেখলেন পানির গভীরে একটি রঙিন দীপ জ্বলছে।
জলাশয়ের রহস্য
তারা দীপটির দিকে এগিয়ে গেলেন এবং দেখলেন এটি একটি রঙিন মুক্তার মত, যা পানিতে ভাসছে। রামু বুঝতে পারলেন, “এই মুক্তাটি আমাদের জলাশয় খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।”
লালু বললেন, “আমরা মুক্তাটি নিয়ে ফিরে যাব এবং জলাশয় খুঁজে বের করব।”
তারা মুক্তাটি হাতে নিয়ে আবার ঝর্ণার পাশে এলেন এবং জলাশয়ের পথ খুঁজে বের করলেন। জলাশয়টি ছিল এক রঙিন হ্রদ, যার পানি ঝকঝকে করে বলছিল।
গাছপালার পুনরুজ্জীবন
রামু মুক্তাটি হ্রদের পানিতে ঢুকালেন। মুক্তাটির আলো পানিতে ছড়িয়ে পড়ল এবং গাছগুলো ধীরে ধীরে সবুজে রূপান্তরিত হতে শুরু করল। গাছগুলো আবার সবুজ হয়ে উঠল এবং তাদের পাতা ঝিলমিল করতে লাগল।
ডিনো ও তার বন্ধুদের চোখে আনন্দের আলো ফুটে উঠল। তারা বলল, “তোমরা আমাদের সত্যিই সাহায্য করেছো। এখন আমাদের গাছপালা আবার সবুজ হয়ে উঠেছে।”
সময়ের যাত্রা অব্যাহত
রামু ও লালু ডিনো ও তার বন্ধুদের বিদায় জানালেন এবং সময়ের যাত্রা অব্যাহত রাখলেন। তারা আবার ঘড়িটি ঘোরালেন এবং নতুন একটি সময়ে ভ্রমণ শুরু করলেন।
দ্বিতীয় যুগ: মধ্যযুগীয় সময়
তারা পৌঁছালেন মধ্যযুগীয় সময়ে, যেখানে দেখতে পেলেন বড় বড় দুর্গ, নাইটস, রানী এবং রাজা। সেখানে তারা পরিচিত হলেন এক সাহসী নাইট, যার নাম ছিল নাইট রায়ান।
নাইট রায়ান জানালেন, “তোমরা কীভাবে এখানে এসেছো?”
রামু বললেন, “আমরা সময়ের যাত্রা করতে এসেছি এবং তোমাদের যুগে এসেছি।”
নাইট রায়ান বললেন, “তাহলে তোমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। আমাদের দুর্গের উপরে এক বড় ড্রাগন আক্রমণ করছে, যা আমাদের শান্তি বিঘ্নিত করছে।”
ড্রাগনের সাথে লড়াই
রামু এবং লালু সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তারা নাইট রায়ানের সাথে মিলে ড্রাগনকে থামাবে। তারা দুর্গের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং ড্রাগনকে দেখতে পেলেন, যা বিশাল ও রঙিন ছিল।
রামু বললেন, “আমরা তোমাকে থামাতে সাহায্য করতে চাই। তুমি কেন আক্রমণ করছো?”
ড্রাগন উত্তর দিল, “আমি সবসময়ই একা থাকি। কেউ আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় না, তাই আমি আক্রমণ করি।”
রামু বুঝতে পারলেন, “তুমি যদি আমাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করো, তাহলে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারি।”
বন্ধুত্বের মূল্য
রামু ও লালু ড্রাগনের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে লাগলেন। তারা তাকে বোঝালেন যে, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা জীবনকে সুন্দর করে তোলে। ড্রাগন ধীরে ধীরে খুশি হতে লাগল এবং তার রঙ পরিবর্তন হতে লাগল।
নাইট রায়ান বললেন, “তোমরা সত্যিই আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এখন আমাদের দুর্গ আবার শান্তিতে ফিরে এসেছে।”
সময়ের যাত্রার সমাপ্তি
রামু এবং লালু আবার সময়ের যাত্রা শুরু করলেন। তারা বুঝতে পারলেন যে, সময়ের যাত্রা শুধু অতীতের রহস্য উদ্ঘাটন করা নয়, বরং বিভিন্ন সময়ের মানুষের সাহায্য করে তাদের জীবনকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করা।
গ্রামে ফিরে আসা
রামু ও লালু সময়ের যাত্রা থেকে ফিরে এলেন এবং গ্রামের সবাইকে তাদের অভিযানের গল্প শোনালেন। গ্রামের সবাই তাদের কীর্তি উদযাপন করলো এবং রামু ও লালু সত্যিই গ্রামের নায়ক হয়ে উঠলেন।